সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অগস্ত্যযাত্রা

 *

ঘুম থেকে উঠে রুদিপ দেখলো তার ফোনে ৫০ এর বেশি মিসড কল।

“ আশ্চর্য এতগুলো মিসডকল তাও আবার অচেনা নম্বর থেকে ”

কল ব্যাক করতেই এক ছোট বাচ্চার কণ্ঠ।

“হ্যালো’’

“আমি মাহিন , আপনি পুলিশ আংকেল না’’

“জী”

কালকে রাতে এক বাচ্চাকে কল্যাণপুরে পাওয়া যায় । ছেলেটি সম্ভবত রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল । এক দোকানের সামনে তাকে কান্না কাটি করতে দেখে আমি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাই । পরিবারকেও খবর দেয়া হয় । গতকাল প্রায় ২ ঘণ্টা সময় কাটাই তার সাথে । এর মধ্যেই সে আমাকে বন্ধুর মতো মনে করে । ওর বাবার সাথে যাওয়ার সময় আমার কাছ থেকে যোগাযোগের নম্বর চেয়ে নেয় । আজকালকার বাচ্চাগুলো ভালোই বুদ্ধিমান ।

“ আংকেল আপনি একটু জলদি আসুন আমার কিছু বলার আছে’’

“আমি তো কাজে যাবো একটু অন্য একদিন আসি?”

“জী একদিন আসেন ’’

“আচ্ছা তোমার আব্বুকে বা আম্মুকে ফোনটা দাও তো সোনা ’’

আমি এটা বলতেই ফোনটা রেখে দিলো বাচ্চটা । হয়তো যখন আমি বলেছি অন্য একদিন আসব তখনই ও মন খারাপ করেছিল । কিভাবে যে বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে হয় সেটাও ঠিক মতো জানা নেই আমার ।

অফিসে গিয়ে পোছাতেই আইজি স্যার এর কল ।

“ তোমাদের দিয়ে কিছুই হবে একটা কেস দিয়েছি তাও সল্ভ করতে পারছো না ? উপর মহলে কি জবাব দিবো আমি । দেখো তোমরা এই কেস সলভ করো যা আর হ্যাঁ এই ব্যাপারে মিডিয়া যেন না জানতে পারে । ’’

“জি স্যার । আমরা কি মিডিয়াকে জানিয়ে জানিয়ে কাজ করি ? ওরা এভাবেই খবর পেয়ে যায় । আর হ্যাঁ স্যার আমার কাছে কেন যেন মনে হয়েছে এইটা সিরিয়াল কিলিং এর কেস”

“হাহাহা , বাংলাদেশে এইসব। যাইহোক তুমি চালিয়ে যাও আমি কালকে দেখা করতে আসছি । আর হ্যাঁ মিডিয়া থেকে কিন্তু সাব্ধান।”

“আচ্ছা স্যার”

এই আইজি স্যার এক বজ্জাত লোক । নিজের বন্ধুর খুন হয়েছে তাই স্পেসালি কেস হ্যান্ডেল করতে দিয়েছে । আর মানুষ মনে হয় মরে না । শালা খালি বলে ৩ দিনের মধ্যে খুনি চাই আরে খুনি কি আমি পয়দা করে আনবো নাকি ।

কনস্টেবল মন্টু “ স্যার কাউরে ফাঁসাইয়া কেসটা দফা রফা করেন আর একটা মেডেল পাইয়া যাবেন”

“আরে না । ভাই জোড়া খুনের ব্যাপার স্যাপার কিভাবে একজন নির্দোষকে ফাঁসাই বলেতো ? এইটা তো আর চুরির কেস না”

“হা হা স্যার তার মানে আপনার মেডেল লাগবো না ”

“ কেন ফাঁসিয়ে দেয়া ছাড়া কি মেডেল পাওয়া যায়না নাকি? ঐ খুনিকে আমি ধরবোই”

কয়েকদিন আগে এক বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আর তার গাড়ির ড্রাইভার খুন হয় । তাদেরকে বাসার সামনে রকতাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় । লোকটির নাম আজিম আহমেদ । তিনি নাকি আইজিপির খুব কাছের বন্ধু । আর একটা পরিচিতিও আছে তার ব্যাবসায়ী যেন তেন ব্যাবসায়ী হয় মাদক এর উচ্চ লেভেল এর সাপ্লায়ার। আমার আছে তার সম্পর্কে সব তথ্য আগে থেকেই ছিল কিন্তু কি আর করার আইজিপির বন্ধু বলে কথা ।  আমার বুজতে আর দ্বিধা থাকলো না যে এই কেস আমাকে ভালোই ভোগাবে ।

সকাল সকাল স্টেশনে আইজিপি কেস এর প্রগ্রেস সম্পর্কে পার্সোনালি জানতে এসেছেন ।

“ কি রুদিপ তোমার নাকি ডিপার্টমেন্ট এ অনেক নাম ডাক । আর এখন পর্যন্ত খুনিকে ধরতে পারলে না । আমি তো তোমার থেকে আর ভালো কিছু আসা করেছিলাম”

“ ব্যপারটা আপনি যত সহজ ভাবছেন স্যার ততোটা নয় । আপনাকে আমি পোস্টমরটেম রিপোর্ট দিচ্ছি স্যার এইটা দেখলেই বুজবেন খুনটা কতোটা আজগুবি”

স্যার রিপোর্ট টা পড়ে আমার দিকে তাকালো , “কি বলো কুকুরের রক্ত ?”

“জি স্যার , কুকুরের রক্ত । খুনি অনাদের হত্যা করার পর ওদের রক্তে কুকুরের রক্ত মিশিয়েছে”

“এটা কেমন কাজ ? আজকালকার খুনি গুলো যেন কেমন হয়ে গেছে’’

“ স্যার এটা কোনো সাইকো এর কাজ । হতে পারে । আমি শিওর”

“ আমিও তো আমার জীবন দশায় কম কেস হ্যন্ডেল করি নি, এইটা কেন যেন অন্য রকম মনে হচ্ছে । আচ্ছা তুমি কি পারবে না আমি কেস সিয়াইডিকে দিয়ে দিবো ?’’

“স্যার আমি পারবো কিন্তু আমাকে কিছু সাপোর্ট দিতে হবে’’

“আচ্ছা”

এই কেসটা কেন জেন আমার মনে ধরে গেছে । কয়জন পারে একটা সাইকোর কেস সল্ভ করতে । এখন এইটার মতো আরো কিছু কেসের খোজ করতে হবে । দেশের সব থানায় এই খুনির ব্যাপারে তথ্য দেয়া হলো । এভাবেই কোন ক্লু ছাড়া আরও ২ টা দিন চলে গেল । আইজির কাছে  আমার মান সম্মান এর ১২টা বাজতেও বাকি থাকবে না মনে হয় । পরেরদিন একটা কল আসলো চট্টগ্রাম এর উখিয়া থানা থেকে । কয়েকদিন আগে নাকি এক ডজন খুন হয়েছে । আর চিন্তার ব্যাপার দুইজনের লাশ একসাথে পাওয়া যায়  সেটায় নাকি  কুকুরের রক্ত মেশানো ছিল । এই কেস এখনো সমাধান হয় নি ।

আমি শিওর হলাম যে আমি ঠিক রাস্তায় এগুচ্ছি । এখন অপরাধীকে ধরার পালা । কিন্তু এতো যেন তেন অপরাধী নয় , মনে হচ্ছে এইটা শিক্ষিত অপরাধী ।

“আচ্ছা স্যার আপনি কেমনে বুঝলেন অপরাধী শিক্ষিত?”

“তেমন না হয় শিক্ষিত বা অনেক নামী লোক । কারণ যারা খুন হয়েছে তারাও তো নামী লোক নামী লোকেদের সাথেই চলাচল করবে আবার নাও হতে পারে ।’’

“তাহলে কি মেডেল আপনার হবে স্যার?”

“আপনি দেখি আমার হাতে মেডেল দেখতে চান?’’

“হ্যাঁ স্যার পাইলে আপনার সাথে একটা সেই কইরা ছবি তুলতাম”

আমি আছি আমার মানসম্মান নিয়ে ও দেখি মেডেল মেডেল করে , মনে মনেই বললাম । কেসটা নিয়ে একটু বেশি চিন্তা ভাবনা করে ফেলছি ।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সেই উখিয়া থানা থেকে আবার একটা কল ।

“স্যার আমাদের এইদিকে আরো একটা লাশ পাওয়া গেছে সন্ধ্যায় , একজন মহিলার লাশ । এই এলাকায় ভালোই প্পুলারিটি আছে । তার লাশের পাশের রক্তের সাথে কুকুরের রক্ত পাওয়া গিয়েছে । এখন তো উপরের থেকে চাপ আসছে আমার উপর , আপনর ইনভেস্টিগেশন কতদুর ? 

“আপনার আর আমার সাসপেক্ট একই লোক এটা কি এখনো বুঝেন নাই”

“হুম তা তো বুঝতে পেরেছি । আপনি আর আমি মিলে কিছু করি আপনি অনুমতি নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসুন”

তারপরের দিন আইজির অনুমতি নিয়ে চট্টগ্রাম চলে গেলাম । যেহেতু কেসটা ইম্পরট্যান্ট আইজি অনুমতি না দিয়ে পারলেন না ।সকালের গাড়িতে উঠে রাত ৬ টা বাজে চট্টগ্রাম পুলিশ কোয়াটারে পোঁছে গেলাম । পরের দিন আবার ক্রাইম স্পট এ । গিয়ে উপস্থিত । সাথে উখিয়া থানার ওসি আকবর । 

“দেখেন কাজের ফাকে চট্টগ্রামটাও ঘুরা হয়ে গেলো”

“হা হা আমি অবশ্য আগে এসেছিলাম একবার । এইবার আমাকে ক্রাইম স্পট টা দেখান ।”

“জি এটার জন্যই তো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা।”

ক্রাইম স্পট এ খয়েরি রঙে শুকনো দাগ দেখতে পেলাম পাশে একটা টিসু পরে আছে। 

“কি ব্যাপার আকবর সাহেব , আপনি এই টিসুটা ফরেনসিকে পাঠান নাই ?’’

“আরে এই সব কি ওই আসামির নাকি?”

“ এইভাবে এত বড় একটা কেসের ইনভেস্টিগেশন করছেন। কতগুলো খুন হয়ে গেলো ।”

টিসুটা হাতে নিতেই একটা গন্ধ পেলাম । হেরোইন মনে হলো । 

“ আচ্ছা এইখানে কি এখনো পপি চাষ হয় নাকি? কোনো আইডিয়া আছে?”

“হয় মনে হয় । আগে তো পাহাড়ের চিপায় চাপায় চলত।”

“এইগুলা নিয়া মামলা মোকাদ্দমা হয় নাই?”

“অবশ্যই হয়েছে আমি ওইসময় নতুন পোস্টিং হয়ে আসি”

“আচ্ছা আমি কাগজ গুলো দেখবো ।”

“চলেন । আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি”

বসে পরলাম । মস্ত বড় ফাইলের ভীড় থেকে বের হল ৮-১০ টা ফাইল । সবগুলোই ২০১০ এর আগের ইরোইন রিলেটেড কেস । গভীর মনোযোগ দিয়ে ফাইলগুলো পড়ছিলাম । একজায়গায় আসতেই চোখ আটকে গেল । এই সেই দুই ডন যাদের নামে অনেক মামলা আছে । কিন্তু পরে মামলাকারী এইসব উইথড্র করেছে । এদের ২ জনের লাশ যেখানে পাওয়া গিয়েছে সেখান থেকেই ঘুরে এলাম । হিসেব কিছু মিলাতে পেরেছি মনে হয় । কিন্তু এদের সাথে  বাকিদের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় নাকি সেটাই মিলিয়ে দেখতে হবে । ফাইলগুলোর কপি সাথে নিয়ে ফিরে গেলাম ঢাকায় । আইজিপি স্যার এর সাথে এটা নিয়ে বসতে হবে । আমার পাওয়া তথ্যগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার কাছে রিপোর্ট করতে হবে ।

এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে সেই ছোট্ট বাচ্চার সাথে তার বাবা আমার চেম্বারে ।

“স্যার না বলেই চলে এলাম , আমার এই ছেলে আপনার সাথে দেখা করার জন্য প্রতিদিন ই বলত ।২ দিন আগে এসেছিলাম আপনি নাকি চট্টগ্রাম ছিলেন তাই আজ এলাম ।”

“ হ্যাঁ এসে ভালই করেছেন”

দেয়ালে আইজী স্যার এর বন্ধুর ছবি দেখে লোকটি, “আরে এনাকে তো চিনি আগে হেরোইন এর স্মাগলার ছিল । ”

“কি বলেন আপনি ওকে রেখে কালকে আসবেন । এই কেস নিয়ে আমি কাজ করছি । ওনার মৃত্যু হয়েছে ।” 

আইজি স্যার কে রিপোর্ট করতে যাচ্ছিলাম ।স্যার কর্কশ কণ্ঠে বলে দিলো , " কেসটা তুমি ড্রপ করে দাও"

" স্যার এতদূর এসে এই কথা বলছেন?"

" আমার মনে হয় তুমি একটু বেশিই জেনে ফেলেছো"

" আপনার কাছে কিছু জানার ছিল"

"স্যার আপনার বন্ধু নিশ্চয়ই ভালো মানুষ ছিলো না সেটা কি আপনি জানতেন?" 

"হ্যা,ওকে আমি অনেক বার না করেছিলাম এসব না করতে ।"

" আর চট্টগ্রাম এ যে কয়জনের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো তাদের সবাই ই মাদক এর কারবারের সাথে জড়িত ছিল”

“তাহলে তোমার কি মনে হচ্ছে এই খুনটা কে করছে?’’

“আমার জানা নেই কিন্তু এমন কেউ করছে যার মনে মাদক নিয়ে অনেক ক্ষোভ আছে ।”

“আচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি”

ব্যাপারটা মিলিয়ে নিলাম ঠিক আছে কিন্তু খুনিকে ধরতে পারবো নাকি এক সন্দেহ আছে । এই কেসটা নিয়ে ১০ দিন এত ঘটাঘাটি করেছি যে আর এগুতে ইচ্ছে করছে না। আইজী স্যার কেস ছেড়ে দিতে বলেছিল ঠিক ই তো শালা তুই আকাম কুকাম করবি আর তোকে মেরে ফেললেই আমাদের দৌড়। নামীদামী মানুষ ছাড়া এই দেশে বিচার পাওইয়া কষ্ট । ৫ বছরের চাকুরী জীবনে এইটুক বুজতে পারছি । 

রাত ১২ টার কাছাকাছি বাজে দরজার  বেল বেজে উঠলো ,

“আসি,এই সময় আবার কে এলো?”

দরজা খুলতেই দেখি অই ছোট্ট ছেলেটির বাবা । 

“এত রাতে আপনি আমার বাসায়? কোন সমস্যা?”

“স্যার ওই খুনের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই’’

“তাই বলে এত রাতে ? আচ্ছা বলুন ।”

“আসলে ওই সবগুলো খুন আমিই করেছি ।’’

“কিহ! এইসব কি বলছেন । মাথা ঠিক আছে আপনার ৫ টা খুন? কেন এসব করছেন?”

“৫ টা নয় আরো ১ টা করবো। যার যাকে মারবো হয়ত তার মুখোশ কোনদিন আপনিও খুলতে পারবেন না । তাই আপনাকে সব সত্য জানাতে এলাম ।”

“আচ্ছা বসুন আমি চা নিয়ে আসছি । তারপর হয় বলবেন”

৫ মিনিট পর চা নিয়ে এলাম । ভাবতেও অবাক লাগছে এতগুলো সাইকো স্টাইলে খুনের আসামীর সাথে এত গভীর রাতে চা পান করছি । একেই বলে কপাল , কপালে লেখা থাকলে কত কিছুই না হতে পারে ।

“ বলুন কাকে খুন করবেন আর কেন করবেন আর কি ই বা মুখোশ উন্মোচন করবেন?”

“ঘটনা শুরু হয় ১২ বছর আগে । আমিও আপনার মতো একজন পুলিশ অফিসার ছিলাম । তখনকার দিনে হেরোইন ম্যাড দ্রব্যের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল আর এই হেরোইন আসতো পপি গাছ এর কষ থেকে । বাংলাদেশে কখনই পপি চাষ হত না । আইজিপি স্যার এর বন্ধু সারোয়ার সাহেব তখনকার নামকরা স্মাগলার ছিল । সারোয়ার বরাবর এর মতই বোকা ছিল । তারা থাইল্যন্ড থেকে হেরোইন বাংলাদেশে সাপ্লাই করতো । এখনকার আইজি স্যার তখন ঠিকি পুলিশ অফিসার ছিল । এইভাবে সাপ্লাই করতে  বেগ পেতে হতো । সরাকার যখন এই ব্যাপারটা নিয়ে নারাচারা দিয়ে উঠে তখন আইজী স্যার বুজতে পেরে গিয়েছিল যে এইভাবে আর আমদানি করে চলবে না । তখন তিনি এক প্ল্যান তৈরি করেন । মায়ানমার থেকে পপি গাছ এর বীজ কিনে আনেন আর মায়ানমার বাংলাদেশ বর্ডার এর পাশে এই পপি চাষ শুরু করেন। বলতে গেলে বাংলাদেশে হেরোইন এর সাপ্লাই আর উৎপাদন তার হাত দিয়েই শুরু হয় ।”

“ এগুলো কতটুকু সত্য ?” 

“ আগে আমার সবটুকু কথা শুনুন প্লিজ । আপনি আমাদের প্রশাসনকে যতটুকু খারাপ ভাবেন আসলে এইটা তার থেকেও খারাপ । এই পপি চাষ শেখার জন্য মায়ানমার থেকে অভিজ্ঞ লোক বাংলাদেশে আনেন । আর বিডিয়ার ও মায়ানমার বর্ডার পুলিশের  টহলের আড়ালে এইসব চালিয়ে যান । ঘটনা শুরু হয় যখন আমি তার যায়গায় পোস্টিং পাই তাকে অবশ্যই অনন্য জায়গায় যেতে হয়েছিল । কিন্তু তিনি ভয়ে ছিলেন যে তার এই মালামালের দায়ীত্বে যে লোক আছে উনি আবার সবকিছু বিগরে দেয় নাকি । আর এমনিতেও এইসব কাজের সব প্রসেস তিনি আর তার বন্ধু রপ্ত করে ফেলাছিলেন । যাওয়ার আগে তার এইসব কাজের ম্যনেজার এর নাম এনকাউন্টার অর্ডার দিয়ে জান । যেইটা আমাকে সম্পন্ন করতে হয়েছিল । আমরা একটা মিশন পরিচালনা করে তাকে হত্যা করি । আর মায়ানমার হতে যে দুজনকে দেশে এনেছিল তাদের নামে তৎকালীন জঙ্গি সংগঠন আরাকান আর্মি এর টাগ দিয়ে বিডিয়ার দিয়ে ক্রস ফায়ারে দেন । বুজলেন তো উনি কত বর অপরাধী ছিলেন।”

“ আপনি তাহলে খুনের খেলায় নেমে গেলেন কেন ?”

“আমি বললাম না । ওর ম্যানেজারকে আমরা এনকাউন্টার এ মেরে ফেলি? আমি কি বোকা ছিলাম নাকি ? আমি ওই ম্যনেজারকে হাতে ২টি গুলি করি । অকে পরে হাসপাতালে নিয়ে সব কথা বের করি । আর তার নামে হেরোইন এর মামলা ছিল তো আমি এইটার মাথাকে ধরতে চেয়েছিলাম ।  ওর সব কথা আমার কাছে রেকর্ড করা ছিল । এই রেকর্ডের জন্যই আমাকে আমার পরিবারকে হারাতে হয়েছে ।”

“ তার মানে আপনার পরিবারের খুনি আইজি ?”

চিৎকার করে লোকটি বলল , “আইজি না সারোয়ার ও দুইজন এই । বাকি যাদের মেরেছি তারাও আইজির লোক । তাদের সবার নামে আমি একশন নিয়েছিলাম । আমি যখন জানতে পারি  এইসবের পিছনে আইজি ছিল তখন আমি কমিশনারের কাছে এই সব তথ্য নিয়ে হাজির হতেই যাচ্ছিলাম । আমার বাসা থেকে একটা ফোন আসে । বাসায় ছুটে চলে যাই আর দেখি আমার স্ত্রী আর মা কে ওরা মেরে ফেলেছে । আর খুনি হিসেবে আমাকেই আসামী করেছে। নিজের পরিবারের মৃত্যুর বোঝা মাথায় নিয়ে ১২ বছর জেল এ ছিলাম কিছু মাস আগেই মুক্তি পেয়েছি।”

“তাহলে ওই বাচ্চাটা কার ?”

“একা একা কি আর থাকা যায় ওকে এক অনাথ আশ্রম থেকে এনেছি ২ মাস আগেই ।”

“ আচ্ছা এখন আপনার কি পরিকল্পনা আইজিকে মারবেন?”

“হ্যাঁ।”

“আর যদি বলি এসব না করে আওব কিছু আদালতে বলুন ।”

“আপনার কি মনে হয় এই দেশে অশায় দের বিচার হয় ? আর আমি নিজে আত্মহত্যা করে মারা যাবো তবুও সারেন্ডার করবো না । ওরা আমার পরিবারকে মেরেছে । ওরা কি মানুষ  ওরা হলো কুকুর ।”

চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছিল আমার । রাত ২ টাচ কলিংবেলএ ঘন্টা বাজলো । এখন আবার কে ?

দরজার লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখি আইজি স্যার।

দরজা খুলতেই,

“কোথায় ওই শুয়োরের বাচ্চাটা ?”

“স্যার আপনি কাকে খুঁজছেন?”

“মজা করিস না , এতদূর আসতে আমার অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে । ঐ শালা তো নিজেও ফাঁসিতে ঝুলবে আমাকেও ঝোলাবে । ওকে আর বাচিয়ে রাখা যাবে না ।”

এর মাঝেই লোকটি আইজির সমনা সামনি হল।

“তুই ওইদিন আমার কথা শুনলে ফ্যামিলি নিয়ে থাকতে পারতি । কি না ছিল তো পুলিশের চাকরি । শালা এই দেশ প্রেম তোরে কি দিলো । তোরেই জেলে ভরছিলাম না ? হাহা দেখ আজকে তোরে কি করি । কুত্তার মতো মারমু”

“স্যার অকে না মেরে গ্রেফতার করি ।”

“তুই কি আমার মান সম্মান মারবি । এইসব দেশ প্রেমিক আমার পছন্দ না ।”

লোকটা বিনা অস্ত্র ছড়াই এসেছিল । এক্সট্রা সেফটির জন্য চা বানানোর সময় পিস্তলটা পকেটে গুজে নিয়েছিলাম । তার ওইসব শুনে মনে কেন যেন ভয় ঢুকে গিয়ে ছিল। এখন আর ভয় নেই।

লোকটির হায়াত মনে হয় শেষ। আমিতো কাঠের পুতুল এর মত সব দেখছিলাম ।লোকটি আবারো চিৎকার করে বলতে লাগলো আমি মরলে ছাদ থেকে লাফিয়ে মরবো তবুও তোর মত কুকুরের হাতে মরব না । 

“ মরতে তোকে আমার হাতেই হবে । এইটাই তর নিয়তি।” 

ঠাসসসস করে একটা বিকট আওয়াজে রুমটা কেপে উঠলো । আমার হাত কাঁপছে । এ কি করলাম আমি? মনের অজান্তেই গুলিটা করে ফেললাম আইজি স্যার এর মাথায় ।

লোকটা আনন্দের সাথে বলল ,

“ঈশ আজ আমি যদি এইভাবে  পুলিশ হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পারতাম।”








মন্তব্যসমূহ