সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ও মরতে এসেছিল

 *

শুরু

- স্যার আসতে পারি।

-জি আসুন। নামঃ আমির হোসেন ।বলুন আপনার কি সমস্যা?
-আসলে আমার কোন সমস্যা নেই । আমি মারা যেতে চাই।
-সিরিয়াস ইস্যু নাকি আপনার রিপোর্ট গুলো দেখান।
-স্যার সত্যি আমি মারা যেতে চাই। এই জীবন আর আমার ভালো লাগছে না।
- আপনার উচিত ছিল সাইকোলজিস্ট দেখানো । আমার কাছে এসে এইসব এর সমাধান হবে না।
-কিন্তু এখন আমি এসেই পরেছি তো আপনি কি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে চান?
-আচ্ছা আপনি যে মারা যেতে চান বলে চেচাচ্ছেন কাহিনিটা কি?
-এই প্রশ্ন এখন পর্যন্ত কেউ করেনি ।আপনি প্রথম করলেন। আসলেই কি আপনি আমার ঘটনা শুনতে ইচ্ছুক?
-হ্যা । যেহেতু আপনি আপনার শেষ রোগী এইটুক সময় তো দেয়া যেতেই পারে।
-আচ্ছা । কথা দিন আপনি আমাকে মরতে সাহায্য করবেন।
-আপনি মরতে চাইলে তো ছাদ থেকে ঝাপ দিয়েই মরতে পারেন এতে আমার কি প্রয়োজন?
-আসলে আত্যহত্যা করা মহাপাপ।আপনি যদি একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলতে পারেন তাহলে সেইটা আত্যহত্যাও হলো না আর কষ্ট ও কম লাগলো ।
-আপনি তো দেখি আমাকে ফাসাতে এইখানে এসেছেন মিয়া। যাইহোক আপনি আপনার স্টোরি বলেন । আমি দেখি কিভাবে আপনাকে উপকার করতে পারি।
- কি আর বল্ব স্যার । আমার জীবনটাই শেষ। আমি আমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসি কিন্তু শেষ এ সেই আমাকে ধোকা দিয়ে চলে গেলো।
-মানে?
-মানে স্যার । ৩ দিন হলো অন্য লোকের সাথে পালিয়ে গেছে। শুনেছি ওরা বিয়ে করে ফেলবে। এই কষ্ট আর কোথায় রাখব। আমার যতটুকু রোজগার তা দিয়ে আমি সাধ্য মত চেষ্টা করে গেছি তাকে খুশী রাখার । বলেও দিয়েছি কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে । বিয়ের সময় ও বার বার বলেছিলাম তোমাকে কেউ জোর করছে নাতো ।কিচ্ছু বলেনি।
-আপনার উচিত পুলিশে মামলা করা । যেহেতু এখনো আপনারা বিবাহিত।
-স্যার । ওনার ইচ্ছা নেই মামলা করেই কি হবে। ওনি কত উচ্চশিক্ষিত । তার সাথে কি আমাকে মানায় ? এখন যার সাথে গিয়েছে হয়ত অনেক সুন্দর আর অবস্থাও অনেক ভালো। ওনাকে কি দোষ দিবো মানুষ কখোনো খারাপ অবস্থায় থাকতে চায় না সেইটা আমি হোক বা আপনি।
-ব্যাপার টা আপনি বুজছেন না। তিনি সব জেনে শুনেই তো আপনাকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাহলে আপনি নিজেকে দোষ দিচ্ছেন কেন? আর নিজেকেই বা শেষ করে দিচ্ছেন কেন? মানুষের জীবন কি এতটাই তুচ্ছ?
-আমার ই সব দোষ। বিয়ে করে জীবন নষ্ট করলাম।
-আরে ভাই বাচ্চাদের মত কথা বলছেন কেন? আপনাকে ব্যাপার গুলো বুজতে হবে । আপনার বউ পালিয়ে গেছে এখন আপনার প্রথম কাজ হবে পরিবারের সবাইকে জানানো । আর থানায় একটা জিডি করা । আপনি তা না করে দেবদাসের মত প্যারা খাচ্ছেন আর নিজের উপর দোষ দিয়ে আত্যহত্যা করতে যাচ্ছেন এইটা কি মনে হয় খুব মহৎ কাজ করছেন?
-নিজেকে কোন দিন ই ভালো মনে হয় নি। আমার মতো মানুষ থাকাও যা আর না থাকাও তা ।
-আচ্ছা কি করেন আপনি?
-জি আমি একটা কম্পানির সেলস ম্যান।
-টার্গেট দেয় নাকি অনেক?
-এসব নিয়ে অনেক ঝামেলায় আছি। আবার দিলেন মনে করিয়ে।
-আমার মনে হয় আপনার কিছু দিনের ছুটি নেয়ার প্রয়োজন । আর থানায় একটা জিডী করে ফেলেন।
-আপনি আগে বলেন আমি কিভাবে মরতে পারবো ? পারলে স্যার আমাকে শান্তি দিন।
-মরার কথা আমি জানি না । কিন্তু আপনাকে আমি শান্তি দিতে পারবো যদি আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন ।
- জি বলুন।
-ঢাকা থেকে সেন্টমারটিন একটা ট্যুর দিয়ে আসুন । পারলে সাজেক ও যেতে পারেন । এতে আপনার মন ভালো থাকবে।
-আপনি কি আদ্য আমাকে শান্তি দেয়ার বেপারে সাজেশন দিচ্ছেন?
-আপনি আমার কথা শুনেই দেখেন না একবার।
-আচ্ছা । তাহলে আজকে আমি উঠি।
-হ্যা । ৭ দিন পর আবার আসবেন।
-আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম আল্লাহ হাফেয।
-জী ভালো থাকবেন আর এইসব নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না ।
-মনে রাখবো।
৩ দিন পর সংবাদ পত্রে দেখতে পেলাম ট্রাক এর সাথে চট্টগ্রাম গামী এক বাসে মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত ২৮ নিহত ৪ । আর নিহতের নামের পাশে দেখি আমির হোসেন (৩২) এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এই ব্যর্থ লোকটির আর আত্যহত্যা করার প্রয়োজন হল না।
২৩-০১-২০২২
মৃত্যু



মন্তব্যসমূহ