সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নাম না দেয়া এক গল্প

১৫ আগস্ট শোক দিবসের কারনে আমার অফিস বন্ধ। প্রতিদিন সকাল ৬ টায় এলার্ম এর আওয়াজে ঘুম ভেংগে যায়। সরকারি বন্ধ থাকা সত্বেও আজকে তার ব্যতিক্রম হয়নি। আসলে ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠার কোনো প্ল্যান ছিল না। গত রাতের একটা ভুলের জন্য আমার সকাল সকাল উঠতেই হলো। এলার্মটা মনে করে বন্ধ করি নি তাই। সারাদিন মাঠে ঘাটে ঘুরাঘুরির পরে বাসায় এসে রান্না করে খেতেও ভালো লাগে না। সোজা বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়া তখন মনে হয় জীবনের সবথেকে বড় ফরজ কাজ। সেই ফাকে এলার্ম বন্ধ করতে ভুলে গেছি । আমার নাম রবিন । একটা এন জি ও তে কাজ করছি। রাঙ্গামাটিতে পোস্টিং হয়েছে। বয়স প্রায় ৩৪ ছুই ছুই । আপন বলতে মা আছেন আর ছোট একটা বোন আছে । বিয়ে হয়েছে ওর অনেক ভালো পরিবারে । আমার এখনো বিয়ে হয় নি আর ভবিষ্যৎ এ বিয়ে করার কোনো পরিকল্পনা ও নেই। চাকরির সুবাদে সেখানে ঘুরে বেড়াই। সত্যি বলতে কি আমার এই একাকি জিবনটাকে আমি খুব উপভোগ করি। 

সারাদিন ঘুমে কাটিয়ে বিকালে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। তখনি আমার বসের ফোন। ইচ্ছে করেই ফোন রিসিভ করিনি। আজ ছুটির দিনে আবার কিসের কাজ। কাড়া লিকারের চা খেতে চলে গেলাম মঞ্জু ভাই এর দোকানে । 

“ভাই কড়া লিকারের এক কাপ রঙ চা দিয়েন।”

“ হ দেতাছি একটু সবুর করেন।”

একটু পরেই হাতে এক কাপ চা চলে আসলো। এটা খেয়ে যেন আবার নিজের জিবনটাকে তাজা করে ফেললাম। 

“মিয়্যা, ঘটনা হুনছেন? কাল রাইতে বলে আমাগো গলির এক মাইয়ারে কেডা জানি চাইপা ধইরা মাইরা লাইছে।”

“বলেন কি?”

“আরে প্যাপার পরেন নাই? ওনেও আইছে। মাইয়াগো বাসায় তো সারাদিন পুলিশ ছিলো। লাশ টাও লগে কইরা লইয়া গেছে।”

“বাপরে এত ভয়ানক অবস্থা।”

“হ, একলা থাকেন তো তাই কই সাবধানে থাইকেন। কিছু হইলে আমাগো ডাক দিয়েন।”

চা খেয়ে সোজা বাড়ি চলে গেলাম। দেশে খুন খারাবা বেড়েই চলেছে । টা ঠিক আছে সেই কিনা আমাদের গলির চিপায় এসে খুন। সন্ধায় আর বাসা থেকে বের হই নি। রাতের কিছু রান্না করা হয় নি। এই বন্ধের দিনে বাসায় আবার কিসে রান্না? রাতে রেস্টুরেন্ট এ জাওয়ার প্ল্যান করলাম। কিছু বন্ধু কলিগদের ফোন দিলাম। সবাই যার যার পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। তাই একাই চলে গেলাম । পাশের টেবিলে একটা মেয়েকে খেয়াল করলাম ওয়েটারের সাথে ঝগড়া করছে মনে হয়। আমি এসব ঝগড়া এরিয়ে চলার চেস্টা করি কিন্তু তখন কেন যেন আর এরিয়ে যেতে পারলাম না। ওয়েটারকে কাছে ডাকলাম।

“আচ্ছা এই মেয়ের সাথে ঝগড়া করছেন কেন?”

“স্যার উনি আমাদের এখান থেকে প্রায় ১০০০ টাকার মত বিল করেছেন কিন্তু উনি নাকি টাকা খুজে পাচ্ছেন না ।”

“তো এমন বিহেব করবেন আপনারা?”

“আসলে স্যার এটা কোন ব্যাপার না উনাকে বললাম বাসার ঠিকানা দিতে কিংবা অন্য কাউকে কল দিতে কিন্তু তিনি কিছুই বলছেন না বসে আছেন।”

মেয়েটাকে এক নজর দেখলাম। সুন্দর একটা মেয়ে চোখে মুখে ভয়। আমি নিজ থেকে তাকে ডাক দিলাম, “ এক্সকিউজমি আপনার নাম?”

সে কোনো কথা বললো না। আমি নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে বললাম,

“আপনি ভয় পাবেন না। আমি আপনার বিল পে করে দিচ্ছি আপনি বাসায় চলে যান।”

“চোখ থেকে কিছু বিন্দু পানি নিচে পরতে দেখলাম।”

“আমি আপনার এ ঋণ শোধ করে দিবো।আমার পার্স হারিয়ে গেছে ফোনটাও সাথে নেই।”

“আহা আপনি যান। আমি দিয়ে দিচ্ছি।”

“সে আমাকে আবারো ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো মাঝে কিছুক্ষন কথাও হলো কিন্তু নামটা আর জিজ্ঞেস করতে পারি নি। যাওয়ার আগে অনেক জোর করে বাসার ঠিকানা নিয়ে গেলো।”

একজন মেয়েকে সাহায্য করতে পেরে নিজেকে যেন কি এক বীর মনে হচ্ছিল ভেতর থেকে। ২ দিন পরে শুক্রবার । সকাল ১১ টা বাজে ।

টুং টাং কলেংবেল বেজেই চলেছে।

চোখ কচলাতে কচলাতে দড়াজা খুলে দেখি সেই রেস্টুরেন্ট এর মেয়েটা । “আপনি?”

“জি,ব্যাচেলর থাকেন বুজতে পেরাছিলাম। একা একা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন সেদিন । তা না হলে তো ভাবী থাকতো সাথে।”

“আচ্ছা।” মেয়েটার বিচক্ষনতা আমাকে মুগ্ধ করে দিলো।

“ভেতরে আসুন।”

“নাহ থাক, লোকেরা কি ভাববে। এই নিন আপনার জন্য।”

একটা টিফিন বাটি হাতে দিয়ে দৌরে নিচে নেমে গেলো। অদ্ভুত ব্যাপার । টিফিন বক্সে প্রায় অনেক্টুক গরুর মাংস,কলিজা ভুনা আর ভাত। দুপুরে জম্পেস এক খাওয়া দিলাম। আর যাই হোক অনেক দিন পরে ঘরোয়া খাবার খেতে পারলাম। 

পরের দিন সকালে কাজে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে মঞ্জু ভাই ডাক দিলেন, “কড়া লিকার দিয়া চা বানাইছি খায়া যান মিয়া।” 

না করতে পারলাম না। হাতে খবরের কাগজ নিয়ে বসলাম। কাগজ হাতে নিতেই চক্ষু চড়কগাছ। যেই মেয়েটির সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা সে মারা গিয়েছে। “ভাই এইটাই কি আমাদের গলির মেয়েটা না?”

“আরে হ। মাইয়াডা ভালা ছিল।”

এদিকে তার মৃত্যুর পরে আমি তাকে কিভাবে দেখব তাই ভাবছিলাম। খবরটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ছিলাম। আর সব থেকে বড় ধাক্কাটা খাই তখনই যখন পড়ি লাশের পোস্টমর্টেম করে পুলিশ জাইনিয়েছে লাশের মধ্যে কোনো কলিজা ছিল না।


                                     সমাপ্ত



মন্তব্যসমূহ